প্রশাসক
অবিভক্ত ভারতের প্রাচীনতম সমৃদ্ধ একটি জেলা যশোরের ঐতিহাসিক এক সীমান্ত শহর বেনাপোল। দেশভাগেরও অনেক আগে সড়ক ও রেলপথে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই জনপদটি। ১৯৭৮ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশ সরকার এখানে একটি স্থলবন্দর গড়ে তোলে। ক্রমাগত বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি-রপ্তানি হওয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ একটি স্থলবন্দরে পরিণত হয় এটি। বন্দর কেন্দ্রীক ব্যবসায়-বাণিজ্যের সম্প্রসারণের ফলে বেনাপোল শহরটি হয়ে উঠেছে অর্থনৈতিকভাবে প্রাচুর্যপূর্ণ ও ঐশ্বর্যশালী। দেশের জিডিপির বড় একটি অংশীদার বেনাপোল কাস্টমস। বছরভর শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে বন্দরটির কাস্টসমের রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
বৈদেশিক বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছাড়াও বন্দরটি ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে একটি ট্রানজিট পয়েন্ট। বন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক দুই দেশে যাওয়া আসা করেন। ভ্রমণকারীদের যাত্রা বিরতির সুবিধার্থে এখানে সরকারি একটি পর্যটন মোটেলসহ বহুসংখ্যক আধুনিক মানের আবাসিক হোটেল ও রেস্তেরাঁ গড়ে উঠেছে। দেশের প্রায় সবকটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে বেনাপোলে।
১৯৭৪ সালে স্থল বন্দরটিতে সর্বপ্রথম একটি কাস্টমস স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে এটি কাস্টমস হাউসে রূপান্তর করা হয়। এর আরো অনেক পরে ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এই বন্দর শহরে বেনাপোল পৌরসভার গোরাপত্তন ঘটে। ২০০৬ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় পৌরসভাটি। একই বছরের ১৬ এপ্রিল প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে বেনাপোল পৌরসভার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
সরকারি একটি গ্রেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শার্শা উপজেলার ৪ নম্বর বেনাপোল ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা অন্তর্ভূক্ত করে পৌরসভাটি গঠন করা হয়। গেজেটে ইউনিয়নটির ১৬টি গ্রামের মধ্যে সাদিপুর, নামাজগ্রাম, দুর্গাপুর, বেনাপোল, কাগজপুকুর, দিঘিরপাড়, ভবারবেড়, গাজিপুর, ছোট-আঁচড়া ও বড়-আঁচড়া এই দশটি গ্রাম পৌর শহরে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ৪ বছরের মাথায় ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর সরকারি প্রজ্ঞাপনে পৌরসভাটি 'গ' শ্রেণি থেকে 'খ' শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। এর পরের বছর ২০১১ সালে ২০ সেপ্টেম্বর এটি একটি প্রথম শ্রেণির (ক-শ্রেণি) পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে। পৌরসভাটির বর্তমান আয়তন ১৭ দশমিক ৪০ বর্গ কিলোমিটার। নিজস্ব জমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫১ একর।
জননেত্রী, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, উন্নয়নের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন দেশ, প্রশাসন, ব্যবস্-বাণিজ্য, জনগণকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এক কথায় দেশ হবে স্মার্ট। তারই ধারাবাহিকতায় বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আমিও বেনাপোল পৌরসভাকে একটি অত্যাধুনিক স্মার্ট পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই এবং
পৌরবাসীকে সাথে নিয়ে শতভাগ নিষ্ঠা, সততা, জবাবদিহিতা ও দল মতের উর্ধে থেকে পৌরসভা পরিচালিত হবে ইনশাল্লাহ।
অপরাহ্নে বেনাপোলের বিশেষ একটি আকর্ষণীয় দিক হলো 'রিট্রিট সিরিমনি'। বন্দরটির সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রতিদিন বিকেলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সামরিক কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে।
পৌরসভা এলাকায় রয়েছে একটি রেলওয়ে স্টেশন। ভারত ও বাংলাদেশে চলাচলাকারী আন্তঃদেশীয় ট্রেন এই স্টেশনে কাস্টমস চেকিংয়ের জন্য যাত্রা বিরতি করে। পৌর শহরটিতে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, বিজিবি ক্যাম্পসহ ১২টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বেনাপোল
প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল বাঙলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের বড় একটি অংশীদার। এটি ছিল লাল সবুজের পতাকার একটি অক্ষত ভূমি। শ্যামল বাঙলার শহর গ্রাম-গ্রামান্তর যখন পাকিস্তানি হায়েনাদের আগুনে পুড়ে ছারখার; বাঙালির তাজা রক্তে চলছে হোলি খেলা; ঠিক তখনও বেনাপোল ছিল একটি মুক্ত ও স্বাধীন জনপদ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ তার বই 'পতাকার অক্ষত ভূমি'তে লিখেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে পত পত করে উড়েছে লাল সবুজের পতাকাটি। একটি দিনও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এখানে নিচে নামেনি ও পাক হানাদার বাহিনী দখলে নিতে পারেনি এই সীমান্ত ভূমির এক ইঞ্চি মাটি। অথচ বাংলাদেশ তখন যেন একটি মৃত্যুকূপ!
সামরিক পরিভাষায় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বেনাপোল ছিল মুক্তিবাহিনীর একটি 'স্ট্রংহোল্ড'। সামরিক ভাষায় স্ট্রংহোল্ড বলতে এমন একটি এলাকা বোঝায় যেটি শত্রুর তীব্র হামলা সহ্য করেও টিকে থাকে। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের মধ্যে গোটা খুলনা অঞ্চল দখল করে নিলেও 'স্ট্রংহোল্ড' বেনাপোল স্থলবন্দরে পা ফেলতে পারেনি পাকস্তানি সেনাবাহিনী। বেনাপোলের ২ বর্গ কিলোমিটার জায়গা হয়ে উঠেছিল পতাকার অক্ষত ভূমি।
কাজী নাজিব হাসান
বৈদেশিক বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছাড়াও বন্দরটি ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে একটি ট্রানজিট পয়েন্ট। বন্দরের ইমিগ্রেশন দিয়ে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক দুই দেশে যাওয়া আসা করেন। ভ্রমণকারীদের যাত্রা বিরতির সুবিধার্থে এখানে সরকারি একটি পর্যটন মোটেলসহ বহুসংখ্যক আধুনিক মানের আবাসিক হোটেল ও রেস্তেরাঁ গড়ে উঠেছে। দেশের প্রায় সবকটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে বেনাপোলে।
১৯৭৪ সালে স্থল বন্দরটিতে সর্বপ্রথম একটি কাস্টমস স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে এটি কাস্টমস হাউসে রূপান্তর করা হয়। এর আরো অনেক পরে ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এই বন্দর শহরে বেনাপোল পৌরসভার গোরাপত্তন ঘটে। ২০০৬ সালের ৫ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় পৌরসভাটি। একই বছরের ১৬ এপ্রিল প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে বেনাপোল পৌরসভার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
সরকারি একটি গ্রেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শার্শা উপজেলার ৪ নম্বর বেনাপোল ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা অন্তর্ভূক্ত করে পৌরসভাটি গঠন করা হয়। গেজেটে ইউনিয়নটির ১৬টি গ্রামের মধ্যে সাদিপুর, নামাজগ্রাম, দুর্গাপুর, বেনাপোল, কাগজপুকুর, দিঘিরপাড়, ভবারবেড়, গাজিপুর, ছোট-আঁচড়া ও বড়-আঁচড়া এই দশটি গ্রাম পৌর শহরে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ৪ বছরের মাথায় ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর সরকারি প্রজ্ঞাপনে পৌরসভাটি 'গ' শ্রেণি থেকে 'খ' শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। এর পরের বছর ২০১১ সালে ২০ সেপ্টেম্বর এটি একটি প্রথম শ্রেণির (ক-শ্রেণি) পৌরসভার মর্যাদা লাভ করে। পৌরসভাটির বর্তমান আয়তন ১৭ দশমিক ৪০ বর্গ কিলোমিটার। নিজস্ব জমির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫১ একর।
জননেত্রী, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, উন্নয়নের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন দেশ, প্রশাসন, ব্যবস্-বাণিজ্য, জনগণকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এক কথায় দেশ হবে স্মার্ট। তারই ধারাবাহিকতায় বেনাপোল পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আমিও বেনাপোল পৌরসভাকে একটি অত্যাধুনিক স্মার্ট পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই এবং
পৌরবাসীকে সাথে নিয়ে শতভাগ নিষ্ঠা, সততা, জবাবদিহিতা ও দল মতের উর্ধে থেকে পৌরসভা পরিচালিত হবে ইনশাল্লাহ।
অপরাহ্নে বেনাপোলের বিশেষ একটি আকর্ষণীয় দিক হলো 'রিট্রিট সিরিমনি'। বন্দরটির সীমান্তের শূন্যরেখায় প্রতিদিন বিকেলে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সামরিক কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে।
পৌরসভা এলাকায় রয়েছে একটি রেলওয়ে স্টেশন। ভারত ও বাংলাদেশে চলাচলাকারী আন্তঃদেশীয় ট্রেন এই স্টেশনে কাস্টমস চেকিংয়ের জন্য যাত্রা বিরতি করে। পৌর শহরটিতে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, বিজিবি ক্যাম্পসহ ১২টি ব্যাংকের শাখা রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন বেনাপোল
প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল বাঙলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের বড় একটি অংশীদার। এটি ছিল লাল সবুজের পতাকার একটি অক্ষত ভূমি। শ্যামল বাঙলার শহর গ্রাম-গ্রামান্তর যখন পাকিস্তানি হায়েনাদের আগুনে পুড়ে ছারখার; বাঙালির তাজা রক্তে চলছে হোলি খেলা; ঠিক তখনও বেনাপোল ছিল একটি মুক্ত ও স্বাধীন জনপদ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক রুকুনউদ্দৌলাহ তার বই 'পতাকার অক্ষত ভূমি'তে লিখেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে পত পত করে উড়েছে লাল সবুজের পতাকাটি। একটি দিনও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এখানে নিচে নামেনি ও পাক হানাদার বাহিনী দখলে নিতে পারেনি এই সীমান্ত ভূমির এক ইঞ্চি মাটি। অথচ বাংলাদেশ তখন যেন একটি মৃত্যুকূপ!
সামরিক পরিভাষায় স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বেনাপোল ছিল মুক্তিবাহিনীর একটি 'স্ট্রংহোল্ড'। সামরিক ভাষায় স্ট্রংহোল্ড বলতে এমন একটি এলাকা বোঝায় যেটি শত্রুর তীব্র হামলা সহ্য করেও টিকে থাকে। ১৯৭১ সালের এপ্রিলের মধ্যে গোটা খুলনা অঞ্চল দখল করে নিলেও 'স্ট্রংহোল্ড' বেনাপোল স্থলবন্দরে পা ফেলতে পারেনি পাকস্তানি সেনাবাহিনী। বেনাপোলের ২ বর্গ কিলোমিটার জায়গা হয়ে উঠেছিল পতাকার অক্ষত ভূমি।
কাজী নাজিব হাসান
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শার্শা
ও
প্রশাসক
বেনাপোল পৌরসভা, বেনাপোল, যশোর।
বেনাপোল পৌরসভা, বেনাপোল, যশোর।